তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ICT হলো এমন একটি ক্ষেত্র যা তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, স্থানান্তর এবং যোগাযোগের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত। এটি কম্পিউটার, সফটওয়্যার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল টুলস ও সিস্টেমের মাধ্যমে তথ্য সংক্রমণ এবং যোগাযোগের প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে।

ICT সাধারণত বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সরকার, এবং অন্যান্য সেক্টরে ব্যবহৃত হয়। আজকের আর্টিকেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইংরেজি কি?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইংরেজি হলো Information and Communication Technology বা (ICT)। তথ্য শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো (Information)। আর Information শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Informatio থেকে এসেছে।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কিযা কোন কিছু সম্পর্কে জানতে কিংবা জ্ঞান অর্জন করতে হলে সে বিষয় সম্পর্কে যে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়, সে উপাত্তগুলোকে তথ্য বলা হয়। আবার প্রযুক্তি শব্দটির ইংরেজি হচ্ছে (Technology)। যা গ্রিক শব্দ Techne ও Logia থেকে এসেছে। যার মানে হচ্ছে কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ার সমষ্টি।

ইহা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। আবার তথ্য প্রযুক্তিকে আলাদাভাবে Information Technology বলা হয়। আর যোগাযোগ প্রযুক্তিকে (Communication Technology) ও বলা হয়। পুরো কথাটি মিলে আমরা সবাই বলি Information and Communication Technology বা (ICT)।

আরও পড়ুনঃ রুপা কিনে টাকা ইনকাম

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?

প্রযুক্তিবিদ্যার যে শাখা দ্বারা বৈদ্যুতিক উপায়ে তথ্য সংযোগ, সংগ্রহ, তৈরি, প্রচার, বিতরণ এবং বদলানো যায় তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা হয়। তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি হচ্ছে এক ধরনের একীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

যা টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং এ সম্পর্কিত সফটওয়্যার, তথ্য সংরক্ষণ, অডিও ও ভিডিও সিস্টেম ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে ১ জন ব্যবহারকারী খুব সহজে তথ্য গ্রহণ করতে পারবে ও তা সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে পারেন।

মোটকথা কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও তা একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিনিময়ের ব্যবস্থাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে তথ্য প্রযুক্তির একটি সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো এক ধরনের একীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থা। যা টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং তৎসম্পর্কিত অডিও ও ভিডিও সিস্টেম, এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার, মিডলওয়্যার তথ্য সংরক্ষণ ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের ব্যবস্থা বা পদ্ধতি।

যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী খুব সহজেই তথ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ, সঞ্চালন এবং তা সহজে বিশ্লেষণ করতে পারেন। ১৯৮০ সালের দিকে প্রযুক্তিতে IC শব্দটির ব্যবহার শুরু করে একাডেমিক গবেষকরা। কিন্তু ১৯৯৭ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে ।

স্টিভেনসন ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই শব্দটি উল্লেখ করেন। যা পরবর্তীতে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের নতুন জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা হয়েছিল।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার?

বর্তমান সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দ্বারা একক তার কিংবা একক লিঙ্ক সিস্টেমের মাধ্যমে টেলিফোন, অডিও ভিজুয়াল এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমন্বয় প্রযুক্তিকে প্রকাশ করা হয়। আগে এই কাজগুলো শুধুমাত্র কম্পিউটার ব্যবহার করে করা হলেও বর্তমানে মোবাইল এবং বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কাজ করা হয়।

একক লিঙ্ক সিস্টেমের মাধ্যমে টেলিফোন, অডিও ভিজুয়াল এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমন্বয়ের ফলে বিশাল অঙ্কের অর্থনৈতিক খরচ কমে গিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ একাউন্ট খুলে টাকা ইনকাম

তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মধ্যে সম্পর্ক?

তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ প্রযুক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য প্রদান অর্থাৎ যোগাযোগ প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে হয়েছে। যা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা Information and Communication Techonology (ICT)

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মূলত একটি সমন্বিত প্রযু্ক্তি। যা কম্পিউটার, মোবাইল, টেলি যোগাযোগ, অডিও ভিডিও, সম্প্রচারসহ আরো বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরী হয়েছে। তাছাড়া স্যাটেলাইট ব্যবহার করে মূহুর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তথ্যের যোগাযোগ সম্ভব হয়।

ইন্টারনেনেটের মাধ্যমে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বের নানান প্রান্তে তথ্যের আদান প্রদান সম্ভব হচ্ছে। ফাইবার অপটিক ক্যাবলের উদ্ভাবন হওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ তথ্যের আদান প্রদানকে প্রচন্ড গতিশীল করে তুলেছে। আধুনিক ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে কম্পিউটার প্রযুক্তি।

অতএব এক কথায় বলা যায় যে, কম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ প্রযুক্তি একত্রিত হয়ে তৈরী হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। যা তথ্যের আদান প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপাদানসমূহ কি কি?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপাদান সমূহ হলোঃ

  • কম্পিউটার এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি
  • কম্পিউটিং (computing)
  • রেডিও, টেলিভিশন, ফ্যাক্স
  • অডিও ভিডিও
  • কম্পিটার নেটওয়ার্ক
  • আধুনিক টেলিযোগাযোগ
  • স্যাটেলাইট
  • মডেম ইত্যাদি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা?

  • এর ফলো খুব কম সময়ে বেশি তথ্য স্থানান্তর সম্ভব হচ্ছে যার ফলে খরচ খুব কম হচ্ছে।
  • এর ফলে সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে ও কাজের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ডেটা স্থানান্তরের গতি খুব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে শিক্ষার্থী ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে।
  • ব্যবসায় বাণিজ্য লাভজনক করে তুলছে।
  • মানুষের কাজের দক্ষতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • তাৎক্ষণিক যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ এবং বিতরণ ইত্যাদি করতে পারছে।
  • অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ ডিপোজিট ছাড়া ইনকাম সাইট

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অসুবিধা?

প্রত্যেক জিনিসের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। ঠিক তেমনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিরও বেশ কিছু অসুবিধা আছে। যেমনঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার অভাব। মানুষ সবসময় চিন্তিত থাকেন তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে। আর এজন্য এ সেক্টরের কর্মীদের কাজগুলো সুরক্ষিত করার জন্য আইটি আপ টু ডেট এবং নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর নীতিমালা থাকা উচিত।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে নিত্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলেও বেকারত্বও দিন দিন বাড়ছে। তার মানে আইসিটি খাতে কাজ করতে যে দক্ষতা দরকার সে দক্ষতা না থাকায় বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুরা, অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা, বড়রা দিনের অধিকাংশ সময় গেম খেলে সময় কাটান।

আর এতে করে তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। আর এজন্য তারা বাইরের প্রাকৃতিক জগত এবং খেলাধুলোর প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। যার ফলে অসুস্থ জাতি গড়ে উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

A Friendly Request: Please Consider Disabling Your Ad Blocker