ফোন স্লো হলে করণীয়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম সঙ্গী হচ্ছে মোবাইলফোন। অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মতো মোবাইলফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করলে স্লো হয়ে যায়। স্মার্টফোন স্লো হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে এর অপারেটিং সিস্টেম সব সময় আপডেট না থাকা।একে সংক্ষেপে ওএস বলে। OS আপডেট রাখা মোবাইলফোনের জন্য খুবই প্রয়োজন। কারণ মোবাইলফোন কোম্পানিগুলো ওএ এর আপডেটের মাধ্যমে ওএস সিস্টেমে থাকা ত্রুটি ও বিচ্যুতিগুলো দূর করে থাকে। আর সে কারণে ওএস আপডেট না থাকলে মোবাইল ফোন স্লো হয়ে পড়ে।
আর তাই আপনি স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম সব সময় আপডেট রাখার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও আরোও কিছু কারণে আপনার মোবাইলফোনটি স্লো হতে পারে সে সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ফোন স্লো হওয়ার কারণ?
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে যেমন আমাদের শরীরের প্রতি যত্নের প্রয়োজন। ঠিকতেমনিভাবে একটি ইলেক্ট্রিক ডিভাইস স্মার্টফোনের কার্যকারীতা ধরে রাখতেও এর প্রতি যত্নবান হওয়া একান্ত জরুরি।
সাধারণত একটি নতুন মোবাইফোন কেনার পর মোবাইফোনের যে স্পিড থাকে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে আপনি চাইলেই একটু সচেতনতা এবং যত্নের সাথে মোবাইলফোনটি ব্যবহার করলেই একটি নতুন মোবাইলফোনের যে স্পিড থাকে তা দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব হয়।
অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইফোন স্লো হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে এর র্যাম (Random Access Memory), রোম (Read Only Memory) এবং প্রসেসর (Processor) কম থাকা।
মূলত এই ৩টি জিনিসই একটি মোবাইলফোনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনার মোবাইলফোনটি কতটা ফাস্ট কাজ করবে তবে অনেকাংশে এগুলোর উপরই নির্ভর করে।
কারণ একটি মোবাইফোনের যাবতীয় কাজ এই তিনটি জিনিস থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। আর তাই মোবাইলফোন কেনার সময় অবশ্যই RAM, ROM এবং Processor এই ৩টি জিনিস যতটা সম্ভব বেশি কেনার চেষ্টা করবেন।
এছাড়াও আপনার মোবাইলফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপসসমূহ নিয়মিত আপডেট না করলে, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস দিয়ে ফোনের স্টোরেজ ভর্তি রাখলে, সারারাত চার্জে রেখে ব্যাটারি ডাউন করে ফেলা সহ আরো বিভিন্ন কারণে আপনার মোবাইল ফোন স্লো হয়ে যেতে পারে।
ফোন স্লো হলে করণীয়?
আমাদের সকলের দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন একপ্রকার অক্সিজেনের মতোই অপরিহার্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ আর তাই ইহা কখনো স্লো হয়ে গেলে আমাদের কাজে অনেক বেঘাত ঘটে৷ য
দিও আমাদের মোবাইলফোন স্লো হয়ে যাওয়া পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমাদের অসচেতনতা। তবে আমরা চাইলেই একটু সচেতন হয়ে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে মোবাইফোন ব্যবহার করলে আর এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন কখনো হতে হবে না।
১. অতিরিক্ত চার্জ দিবেন না
আমরা সবাই গভীর রাত পর্যন্ত ফোন ব্যবহার করে ঘুমানোর পূর্বে ফোন চার্জে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এতে করে সারারাত ফোন চার্জে লাগানো থাকে। এতে ব্যাটারি ওভারলোড হয়ে গরম হয়ে যায়৷ যার ফলে ব্যাটারি তো ডাউন হয়।
সেই সঙ্গে ব্যাটারি গরম হওয়ার ফলে মাদারবোর্ডেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে স্মার্টফোন অনেক স্লো হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় মাদারবোর্ডে বেশি সমস্যা দেখা দিলে মোবাইল ফোনটি পুরোপুরি অকেজোও হয়ে পড়ে।
২. কম প্রয়োজনীয় অ্যাপস গুলো Disable করে রাখুন
আমাদের স্মার্টফোনের সব অ্যাপস আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি না৷ আর এমন অনেক অ্যাপস থাকে। যেগুলো কয়েকদিন পর পর কিংবা সপ্তাহ খানেক পর পর হঠাৎ প্রয়োজন পড়ে। আর এ ধরনের অ্যাপস গুলো Disable Apps বা Force Stop’ করে রাখবেন।
Disable করে রাখার ফলে এই অ্যাপস গুলো মোবাইলে থাকা স্বত্বেও কোন ধরনের কাজ করে না। আর এতে মোবাইলের Internal Storage ও RAM এর উপরও কোন ধরনের চাপ পড়ে না। যা আপনার মোবাইলফোনকে ফাস্ট রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকো।
আর হ্যাঁ, ওই অ্যাপস গুলো পূনরায় ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অ্যাপস সেটিংসে গিয়ে ‘Enable Apps’ এই অপশনে ক্লিক করতে হবে৷
৩. প্রতিটি এপস এর Cache Clear করুন
আপনি কি জানেন? আপনার ফোনে যতগুলো অ্যাপস রয়েছে এবং আপনি অ্যাপস গুলো যতবকর ব্যবহার করেন এর ডাটাগুলো সব ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজে গিয়ে জমা হয়৷ ডাটা জমতে জমতে ইন্টারনাল স্টোরেজের ধারন ক্ষমতা কমতে থাকে।
এবং আপনার মোবাইলফোনও স্লো হতে থাকে৷ অথচ আপনি চাইলেই একটু সময় নিয়ে কয়েকদিন পর পর প্রতিটি অ্যাপস এর Cache Clear করে আপনার স্মার্টফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ ফ্রি রাখতে পারেন।
আপনার ফোনের Cache Clear করতে → Apps Info → Storage → Clear Cache. আপনার ইন্টারনাল স্টোরেজ এবং RAM যত ফ্রি থাকবে আপনার মোবাইলফোন ততই ফাস্ট থাকবে।
৪. স্মার্টফোনের সকল অ্যাপস আপডেট রাখা
আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের ফোনে একবার যে অ্যাপসটি ইন্সটল করা থাকে। সেই অ্যাপসটি আমরা নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকি। এতে একটি অ্যাপস অনেকদিন ব্যবহার করতে করতে এটি স্লো কাজ করতে থাকে।
অথচ ডেভেলপাররা প্রতিটি অ্যাপস কয়েকদিন পর পর নতুন নতুন ফিচার এড সহ আরোও আপগ্রেড করে আপডেট করে থাকেন। আপনার স্মার্টফোনের অ্যাপস গুলো আপডেট করুন। যার ফলে আপনার অ্যাপস ফাস্ট কাজ করবে ও মোবাইলফোন সহজে হ্যাং মারবে না কিংবা ক্রাস করবে না।
৫. SSD মেমরি কার্ড ব্যবহার করুন
আমাদের প্রত্যেকের ফোনে অডিও, ভিডিও ও পিকচার থাকে। কিন্তু এই অডিও, ভিডিও ও পিকচার যদি আপনার ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজে থাকে। তাহলে আপনার ফোন বেশি লোড না নিতে পেরে স্লো কাজ করে। আর তাই আপনার স্মার্টফোনটিকে ফাস্ট রাখতে এক্সটার্নাল SSD কার্ড বা মেমোরি কার্ড ব্যবহার করবেন।
৬. ফোনের ডিফল্ট ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন
আমরা অনেকেই আমাদের ফোনের ওয়ালপেপারের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন থার্ডপার্টি অ্যাপস ব্যবহার করি। এছাড়াও হোম স্কিনে এনিমেটেড ওয়ালপেপার ব্যবহার করি। ইহা মোবাইলফোন স্লো কাজ করার অন্যতম একটি কারণ।
আর তাই থার্ডপার্টি অ্যাপসের এনিমেটেড ওয়ালপেপার ব্যবহার না করে। আপনার ফোনের ডিফল্ট অনেক সুন্দর সুন্দর ওয়ালপেপার থাকে সেগুলো ব্যবহার করবেন।
৭. আপনার স্মার্টফোনকেও বিরতি দিন
আমরা মানুষেরা যেমন একাধারে অনেক সময় নিয়ে কাজ করতে পারবো না। মাঝে মধ্যে আমাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনিভাবে স্মার্টফোনও যখন একাধারে অনেকক্ষণ ব্যবহার করা হয়। তখন তারও একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আপনার মোবাইল ফোন যদি বিশ্রাম না পায়, তখনি মোবাইফোনটি স্লো কাজ করা শুরু করে দেয়৷ আর তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর কাজের ফাঁকে মোবাইলফোনটিকে বিশ্রাম দিন।
৮. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসসমূহ আনইন্সটল করে দিন
আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের মোবাইলফোনে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ইন্সটল করে থাকি। আর ওই অ্যাপসগুলো তাৎক্ষণিক ব্যবহারের পর পরবর্তীতে আর তেমন ব্যবহার করা হয় না।
কিন্তু তারপরও আমরা অলসতার কারণে কিংবা আমাদের মনে না থাকার কারণে অ্যাপসগুলো দিনের পর দিন আমাদের র্যাম এর অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে। আর অতিরিক্ত অ্যাপসগুলো স্মার্টফোন স্লো হবার অন্যতম একটি কারণ।
আপনার মোবাইলফোনে যত অ্যাপস কম রাখবেন ফোন ততই ফাস্ট কাজ করবে। এবং হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আর তাই আজই আপনার ফোনের অতিরিক্ত অ্যাপসগুলো আনইন্সটল করে দিন।
৯. ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট ও রিস্টার্ট দেওয়া
আপনার ফোনটি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ স্লো হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনি ১ বার আপনার মোবাইল ফোনটি ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট করে নিতে পারেন। এরপর আপনি আপনার মোবাইল ফোনের সফটওয়্যারগুলো আপডেট দিয়ে নিবেন।
এতে করে আপনার মোবাইল ফোনটি মোটামুটিভাবে অনেকটা ফাস্ট হয়ে যায়। আর হ্যাঁ ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট দেওয়ার আগে অবশ্যই ফোনে থাকা আপনার যাবতীয় ডাটা সমূহের ব্যাকআপ করে রেখে দিবেন।
এছাড়াও আপনি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর আপনার ফোনটি রিস্টার্ট করে নিতে পারেন। এটিও আপনার মোবাইল ফোনকে ফাস্ট রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১০. অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন
মোবাইলফোন স্লো হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো অপারেটিং সিস্টেম বা OS আপডেট না করা। অনেক ক্ষেত্রে আপডেট অপারেটিং সিস্টেমে বাগ ও ল্যাগ ফিক্স ছাড়াও প্রসেসিং অনেকটা আপডেট হয়৷
যার ফলে ফোন ফাস্ট কাজ করে। এক্ষেত্রে কয়েকদিন পর পর সেটিংস থেকে আপডেট অপশনটি চেক করুন। নতুন কোন আপডেট আসলে দ্রুত আপনার ফোনে তা আপডেট করে নিন৷ ফোনের অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপসগুলো আপডেট থাকলে ফোন খুব দ্রুত কাজ করে।
শেষ কথা
মোবাইলফোন আধুনিক সভ্যতায় এক বিশাল বিপ্লব ঘটিয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছেই মোবাইলফোন অন্যতম সঙ্গী।
এই পোস্ট আমরা ফোন স্লো হলে করণীয় কি ও ফোন স্লো হওয়া কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি পোস্টটি আপনাদের অনেক ভাল লেগেছে। সবাইকে ধন্যবাদ।