গণঅভ্যুত্থান কি
গণঅভ্যুত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা, যা জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধ এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ।এটি সাধারণত কোনো শাসনব্যবস্থা, অন্যায়, নিপীড়ন বা সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয় এবং জনগণের অধিকার আদায়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
ইতিহাসে বহু গণঅভ্যুত্থান সমাজ ও রাষ্ট্রের গতিপথ পরিবর্তন করেছে, যা একটি জাতির রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গণঅভ্যুত্থান অর্থ কি?
গণঅভ্যুত্থান বলতে বোঝায় জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে সংঘটিত একটি সংগঠিত বা স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ বা প্রতিবাদ, যা সাধারণত কোনো শাসনব্যবস্থা, সরকার, সামাজিক অন্যায় বা নিপীড়নের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।
এটি সমাজে বড় ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে সংঘটিত হয় এবং অনেক সময় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন বা সংস্কারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গণঅভ্যুত্থান ইংরেজি কি?
গণঅভ্যুত্থানের ইংরেজি হলো “Mass Uprising”। এছাড়াও প্রাসঙ্গিকভাবে “Popular Uprising” বা “People’s Uprising” বলা যেতে পারে, তবে “Mass Uprising” সবচেয়ে সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয়।
গণঅভ্যুত্থান কি?
গণঅভ্যুত্থান (Mass Uprising) হলো একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলন যেখানে জনগণের বৃহৎ অংশ কোনো নির্দিষ্ট দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংঘবদ্ধভাবে বিদ্রোহ করে।
এটি সাধারণত কোনো শাসকগোষ্ঠী, সরকার, নীতি বা সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে সংগঠিত হয়। গণঅভ্যুত্থান শান্তিপূর্ণ বা সহিংস উভয় রূপেই ঘটতে পারে এবং এটি অনেক সময় বিপ্লব, পরিবর্তন বা সংস্কারের পথ প্রশস্ত করে।
গণঅভ্যুত্থানের বৈশিষ্ট্য?
১. বৃহৎ জনসম্পৃক্ততা
সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা নেতৃত্বাধীনভাবে এতে অংশগ্রহণ করে।
২. সাংগঠনিক কাঠামো
কখনো এটি স্বতঃস্ফূর্ত হলেও, অনেক সময় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন বা ছাত্রসমাজ এটি সংগঠিত করে।
৩. বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু
কোনো নির্দিষ্ট শাসনব্যবস্থা, আইন, অন্যায় বা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এটি পরিচালিত হয়।
৪. পরিবর্তনের লক্ষ্য
অধিকাংশ গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিবর্তন আনা।
কিছু ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান?
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান (বাংলাদেশ)
পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পথ প্রশস্ত হয়।
২০১১ সালের আরব বসন্ত
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন যা অনেক শাসকের পতনের কারণ হয়।
বাংলাদের গণঅভ্যুত্থান ২০২৪
২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, যা “জুলাই বিপ্লব” নামে পরিচিত, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এই গণঅভ্যুত্থান মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুন মাসে।
যখন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০% কোটা পুনর্বহাল করা হয়।
যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালীন ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
এই ঘটনা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন এবং ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করেন।
সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন সত্ত্বেও আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সমর্থক ও পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, যা সহিংসতার সূত্রপাত করে।
অবশেষে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পলায়ন করেন। ফলে বাংলাদেশ সাংবিধানিক সংকটে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
এই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গভীর প্রভাব ফেলে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
শেষ কথা
গণঅভ্যুত্থান সাধারণত জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও দুঃখ-দুর্দশার ফলাফল এবং এটি একটি জাতির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।