চুয়াডাঙ্গা জেলার নামকরণের ইতিহাস
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। যার নামকরণ ঘিরে রয়েছে বহু মত ও লোককথা। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক
এবং সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চুয়াডাঙ্গা নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন জনশ্রুতি, কিংবদন্তি ও ইতিহাসবিদদের অভিমত পাওয়া যায়।কেউ কেউ মনে করেন, এখানে এক সময় “চুড়ি” ও “ডাঙ্গা” শব্দের সংমিশ্রণে নামকরণ হয়েছে। যেখানে “চুড়ি” বোঝাতো শাঁখা বা অলঙ্কার, আর “ডাঙ্গা” মানে উঁচু জায়গা বা বসতি।
আবার অনেকে বলেন, “চূড়ান্ত ডাঙ্গা” বা “চূড়ান্ত সীমা” অর্থেও এ নামের উৎপত্তি হতে পারে। যা এক সময়ে বিভিন্ন রাজ্য বা অঞ্চল সীমার নির্দেশক ছিল। ইতিহাস, ভূপ্রকৃতি ও স্থানীয় জনগণের মুখে মুখে ছড়িয়ে থাকা
এসব ব্যাখ্যা চুয়াডাঙ্গার নামকরণকে করে তুলেছে রহস্যঘেরা ও আকর্ষণীয়। এই জেলার নামের পেছনের ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে আমরা এ অঞ্চলের অতীত জীবনযাত্রা, জনপদ গঠনের প্রক্রিয়া ও লোকসংস্কৃতির চিহ্ন খুঁজে পাই।
চুয়াডাঙ্গা জেলার নামকরণের ইতিহাস?
গ্রিক ঐতিহাসিকদের মতে, বর্তমান চুয়াডাঙ্গা জেলার এলাকাতেই প্রাচীন ও বিখ্যাত গঙ্গারিডাই (Gangaridai) রাজ্য অবস্থিত ছিল। এ অঞ্চলে “গাঙ্গেয়” নামক একটি শহরের অস্তিত্বের কথাও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যা এই জেলারই অংশ ছিল বলে ধারণা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা নামকরণের বিষয়ে একাধিক মত প্রচলিত রয়েছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় মতানুযায়ী, এ এলাকার নামকরণ হয়েছে মল্লিক বংশের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি চুঙ্গো মল্লিকের (জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত চুয়া মালিক) নামানুসারে।
অনুমান করা হয়, ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চুঙ্গো মল্লিক তার স্ত্রী, তিন পুত্র ও এক কন্যাকে নিয়ে ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার ইটেবাড়ি-মহারাজপুর গ্রাম থেকে মাথাভাঙ্গা নদীপথে এসে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন।
১৭৯৭ সালের একটি রেকর্ডে এই অঞ্চলের নাম “চুঙ্গোডাঙ্গা” হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীকালে ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের সময় উচ্চারণের বিকৃতির ফলে “চুয়াডাঙ্গা” নামটি প্রচলিত হয়ে যায়। নামকরণ সম্পর্কে আরও দুটি জনশ্রুতি প্রচলিত আছেঃ
২. চুয়া < চয়া থেকে চুয়াডাঙ্গাঃ এখানে “চয়া” শব্দের অর্থ “পরিষ্কার”, অর্থাৎ পরিষ্কার স্থান।
১. চুয়া + ডাঙ্গা = চুয়াডাঙ্গাঃ স্থানীয় উপভাষায় ‘চুয়া’ অর্থ ‘পরিষ্কার’ এবং ‘ডাঙ্গা’ অর্থ ‘উঁচু বা খোলা স্থান’। অর্থাৎ, পরিষ্কার উঁচু স্থান থেকে নামটি এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
উপরোক্ত দুইটি মত বর্তমানে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুনঃ রংপুর নামকরণের ইতিহাস
প্রশাসনিক ইতিহাস
১৯৬০ সালে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা গঠিত হলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে। এটি ছিল জেলার নগর প্রশাসনের প্রাথমিক ভিত্তি, যার মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়।