ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি উপায়ে

আমরা অনেকেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখে থাকি। এখন হয়তো সবাই ভাববেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা আয় করা কিভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে। প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও টাকা আয় করা সম্ভব।এই আর্টিকেলটিতে প্যাসিভ ইনকাম কি, প্যাসিভ ইনকাম কত প্রকার, প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় ও ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি উপায়ে এই কয়েকটি বিষয় নিয়ে তুলে ধরব। চলুন তাহলে শুরু করা যাকঃ

প্যাসিভ ইনকাম কি?

প্যাসিভ ইনকাম হলো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা ইনকাম করার একটি সহজ পদ্ধতি। আসলে প্যাসিভ ইনকাম বিষয়টি অনেকটা ঐ ধরনের। কেননা খুব বেশি কাজ কিংবা সময় না দিয়ে টাকা আয় করার পদ্ধতি হলো প্যাসিভ ইনকাম।

আর এই ইনকামের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মূল ইনকামের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপায় কাজে লাগিয়ে টাকা ইনকাম করে নিজের আর্থিক অবস্থা অনেক বেশি ভালো করে নিজের জীবনযাত্রার মান আরোও বেশি উন্নয়ন করতে পারেন। আর তাই বর্তমান যুগে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইনকামের পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকাম থাকাও প্রয়োজন।

আপনি যদি অন্য কোন কাজের মাধ্যমে নিজের জন্য বাড়তি একটা ইনকামের রাস্তা তৈরি করতে পারেন। তবে আপনার ভবিষ্যতের জন্য তা খুব কার্যকরী হবে। আর তাই প্যাসিভ আয় থাকলে আপনি নিজের টাকা ইনকাম নিয়ে কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকবেন।

আরও পড়ুনঃ প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া

টাকা ইনকামের পদ্ধতি?

অনলাইন থেকে বিভিন্নভাবে টাকা আয় করা যায়। তবে মৌলিকভাবে অনলাইনে ইনকামকে ২টি ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমনঃ

• একটিভ ইনকাম
• প্যাসিভ ইনকাম

একটিভ ইনকাম কি?

একটিভ ইনকাম হলো এমন এক ধরনের পদ্ধতি। যেখানে আপনি কাজ করলে টাকা আয় করতে পাবেন আর কাজ না করলে টাকা আয় পাবেন না। যেমন একজন কন্টেন্ট রাইটার ততক্ষণ পর্যন্ত টাকা পান যতক্ষুণ পর্যন্ত ক্লায়েন্ট তাকে কাজ দিবে ও সে কাজটা করতে থাকবে। এটার বাহিরে সে কোন ধরনের টাকা পাবেনা।

কন্টেন্ট রাইটার যদি তার কন্টেন্ট লেখার কাজটি বন্ধ করে দেন, তার তাহলে তার টাকা ইনকাম বন্ধ হয়ে যাবে। আর এসব কিছু হলো একটিভ ইনকাম।

প্যাসিভ ইনকাম কি?

প্যাসিভ ইনকাম হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি। যেখানে একবার কোন ধরনের একটি কাজ করে পরবর্তীতে কাজ না করেও সেখান থেকে টাকা ইনকাম হবে। উদাহরণস্বরুপ ধরুন আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। আপনি একটি ডিজাইন তৈরী করে মাইক্রোস্টক ওয়েসাইটে ডিজাইনটি আপ্লোড করলেন।সেখান থেকে যতজন ডিজাইনটি ডাউনলোড করবে তত পরিমাণ টাকা আপনার মূল একাউন্টে টাকা যোগ হতে থাকবে। অর্থাৎ আপনি একবার এই একটি কাজ করলেন এবং পরবর্তীতে আর কোন ধরনের কাজ না করেও সেখান থেকে ভাল পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারছেন। আর এটিই হচ্ছে প্যাসিভ ইনকাম।

ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি উপায়ে?

প্যাসিভ ইনকাম হচ্ছে মূলত একটি নির্দিষ্ট ইনকামের পাশাপাশি আরোও বেশি টাকা ইনকামের জন্য কোন ধরনের বাড়তি এফোর্ট না দিয়ে টাকা ইনকাম করা। প্যাসিভ ইনকামের বিভিন্ন ধরনের উপায় আছে।

যে উপায়গুলো ফলো করে আপনি অনেক ভাল পরিমাণে টাকা আয় করতে পারেন এবং এর জন্য আপনার কোন ধরনের বাড়তি কাজও করা লাগবে না। নিচে ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি উপায়েঃ

স্টক কনটেন্ট বিক্রি করে

আপনা নিজের তোলা যেকোন ছবি কিংবা ভিডিও অথবা অন্য কোন ধরনের ডিজাইন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেল করেও আপনি প্যাসিভ উপায়ে টাকা ইনকাম করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ সরকার অনুমোদিত ইনকাম app

ফ্রিল্যান্সিং

আপনি একটি নির্দিষ্ট কাজের পাশাপাশি কিছু স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক ভাল পরিমাণে টাকা আয় করতে পারেন। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এ প্যাসিভ আয়ের পাশাপাশি বর্তমানে অনেকেই নিজেদের পূর্ণ ক্যারিয়ার হিসাবে নিয়ে টাকা ইনকাম করছে।

এর জন্য আপনি কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।

ফরেক্স

ফরেক্স করেও আপনি ভাল পরিমাণের টাকা ইনকাম করতে পারেন। যাতে আপনার বাড়তি আয় হতে পারে। ফরেক্স হচ্ছে মূলত বৈদেশিক মুদ্রা ট্রেডিং এর অনলাইন একটি মাধ্যম। যার মাধ্যমে আপনি যেকোন দেশে বসে ডলার ও ইউরো ইত্যাদি ট্রেড করে ঘরে বসে টাকা ইনকাম করতে পারেন।

ইনভেস্টিং

প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হচ্ছে ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ। আপনি বিভিন্ন জায়গায় টাকা ইনভেস্ট করতে পারেন। যেমনঃ কোন বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যের ব্যবসায়তে ইনভেস্ট করে, রিয়েল এস্টেটে ইনভেস্ট করে, বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ইনভেস্ট করে, শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করে ইত্যাদি।

তবে যেকোন জায়গায় ইনভেস্ট করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই তার সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতে হবে এবং সতর্কতার সাথে আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে।প্রয়োজনে আপনি একজন ইনভেস্টিং এক্সপার্টের সাহায্য নিতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো প্যাসিভ আয়ের অন্যতম একটি মাধ্যম। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আপনার প্রথমে একটি ওয়েবসাইট কিংবা ফেইসবুক পেইজ অথবা ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। এই প্লাটফর্মগুলো উল্লেখযোগ্য কিছু অডিয়েন্স থাকতে হবে।

যাদের কাছে সহজে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। এরপর আপনার অডিয়েন্স যে বিষয়টি পছন্দ করেন সে সংক্রান্ত কোন একটি পণ্য তাদের কাছে প্রচার করে আপনি কমিশন ভিত্তিতে টাকা আয় করতে পারেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সী

আজকাল আমরা সবাই একটি কথা শুনে থাকি সেটি হচ্ছে বিটকয়েন। ইহা ক্রিপ্টোকারেন্সীর একটি কারেন্সি। যেমনঃ আমরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মুদ্রা দেখতে পাই যেমনঃ টাকা, রুপি, পাউন্ড, ডলার ও ইউরো এই সব মুদ্রার মান যেমন ভিন্ন ভিন্ন থাকে।

তেমনি ক্রিপ্টোকারেন্সীরও বিভিন্ন কারেন্সি আছে যেমনঃ বিটকয়েন, ডগি কয়েন, ইথেরিয়াম ইত্যাদি। যদিও বাংলাদেশে বসে ক্রিপ্টোকারেন্সীতে ইনভেস্ট করাটা অবৈধ। কিন্তু আপনি যদি অন্য কোন দেশে থাকেন তবে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সীতে ইনভেস্ট করে ট্রেড করে টাকা আয় করতে পারেন।

বর্তমানে একটি বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ২৫ হাজার ডলারেও বেশি। আর তাই আপনার যদি ক্রিপ্টোকারেন্সীতে টাকা ইনভেস্ট করা সম্ভব হয়। তবে এখানে ভাল পরিমাণে প্যাসিভ আয় করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ কোন গেম খেলে টাকা ইনকাম করা যায়

রেস হর্স ক্রয়

রেস হর্স বলতে এখানে ঘোড়াকে বুঝানো হয়নি। বরং অনেক মানুষ অধিক টাকা ইনকাম করার লোভে ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলে। যা খেলে হয় অনেক টাকা লাভবান হবেন নয়তো সবকিছু হারাবে। যা খুব বেশি রিস্কি, আর তাই আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে যে আপনি আসলে কোন কাজটি করবেন।

কোর্স বিক্রি

বর্তমানে যে বিষয়গুলোর সবচেয়ে চাহিদা বেশি আপনার যদি তার মধ্যে কোন একটি বিষয় জানা থাকে। তবে আপনি সে বিষয়ের উপর কোর্স তৈরি করে সেই কোর্স বিক্রির মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন।

বাড়ি এবং ফ্ল্যাট ভাড়া

আপনার যদি একটি বাড়ি বানানো থাকে কংবা একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করা থাকে। তবে আপনি তা ভাড়া দিয়ে টাকা আয় করতে পারেন। বর্তমানে শহরে ভাড়া বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের অনেক চাহিদা রয়েছে।

উপরে উল্লেখিত উপায়গুলো ছাড়াও আরও কিছু উপায় আছে যেমনঃ বই লেখা, ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট বিক্রি, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস তৈরি করা ইত্যাদি। আর এই সকল জিনিস করে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইনকামের পাশাপাশি বাড়তি কিছু টাকা ইনকাম করতে পারেন।

ইউটিউবিং

বর্তমানে ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করে ভাল পরিমাণে টাকা আয় করা যায়। বর্তমানে ইউটিউব হলো বিশ্বের সব থেকে বড় ভিডিও প্লাটফর্ম। আপনি অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারেন। আর তাই ইউটিউবে ভাল ভিডিও তৈরি করেও প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব।

প্যাসিভ ইনকাম কখন করবেন?

আপনি চাইলে যেকোন সময়ে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। কেননা ইহা করার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে প্যাসিভ ইনকাম করতে হলে আপনার হয় কিছু স্কিলে প্রয়োজন হবে। অথবা বিনিয়োগ করার মতো আপনার টাকা থাকতে হবে। কেননা আপনি যদি কোন জায়গায় বিনিয়োগ করেন তখন সেই উৎস থেকে টাকা আসবে।

কিংবা আপনার যদি কোন কাজে নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা থাকে তখন আপনি এই ধরনের কাজে টাকা ইনকাম করতে পারেন। আর আপনার যদি এই দুটির মধ্যে কোনোটিই না থাকে। তখন প্যাসিভ আয় আপনার জন্য খুব কঠিন হবে। আর তাই আমরা অনেকে প্যাসিভ আয়কে সহজ মনে করলেও আসলে ইহা ততটাও সহজ নয়।

আরও পড়ুনঃ টেলিগ্রাম থেকে ইনকাম

নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইনকামের পিছনে না ছুটে আপনি যদি প্যাসিভ আয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন সেটি আপনার জন্য সবচেয়ে বোকামি হবে। কেননা প্যাসিভ আয় মানেই হলো একটি নির্দিষ্ট ইনকামের পাশাপাশি বাড়তি টাকা আয় করা। আর তাই প্রথমে আপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ইনকাম দরকার হবে।

এরপর আপনি তা কাজে লাগিয়ে বিভিন্নভাবে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। তাই প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে যে আপনি কিভাবে নির্দিষ্ট একটি আয়ের উৎস তৈরি করবেন। এরপর তা কাজে লাগিয়ে আপনাকে প্যাসিভ আয়ও বের করতে হবে। তাই আপনার দুই ধরনের ইনকামই লাগবে।

প্যাসিভ ইনকাম কেন জরুরি?

বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ার পাশাপাশি অনেক বেশি ব্যয়বহুলও হয়ে গিয়েছে। আর তাই এই জীবনযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি চাকরি কিংবা ব্যবসার ইনকাম দিয়ে চলতে খুবই কষ্টকর হবে। আর তাই নির্দিষ্ট টাকা ইনকামের পাশাপাশি আপনাকে একটি বাড়তি টাকা ইনকামের রাস্তা বের করে সেখান থেকে টাকা ইনকাম করার মাধ্যমে নিজের চাহিদাগুলে পূরণ করতে পারেন।

এখন বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ীরা তাদের মূল টাকা ইনকামের পাশাপাশি প্যাসিভ আয় করে নিজেদের আয় আরোও বহুগুণ বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আর তাই এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আপনার অন্য আয়ের উৎস থাকা একান্ত জরুরি।