চিতই পিঠা কিভাবে বানায় | চিতই পিঠা বানানোর রেসিপি
চিতই পিঠা সাধারণত বাঙালি পিঠা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের চিতই পিঠা খুবই জনপ্রিয়।গ্রাম অঞ্চলে অনেক সময় চিতই পিঠা তৈরি করতে দেখা যায়।অনেকে হাসের মাংসের সাথে চিতই পিঠা খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে শীতকালে চিতই পিঠার কদর একটু বেশি দেখা যায়। চিতই পিঠা নানান ধরনের ভর্তার সাথে মিশিয়ে খেতে অনেক সুস্বাদু লাগে।
আজকের পোস্টে চিতই পিঠা বানানোর উপায় বা চিতই পিঠা রেসিপি সম্পর্কে বা দুধ চিতই পিঠা বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হবে।
চিতই পিঠার উপকারিতা?
চিতই পিঠা খাবার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা অবশ্যই আমাদের জানা জরুরী। চিতই পিঠাতে রয়েছে চালের গুড়া যা সাধারণত ৯০% শর্করার উৎস, তাছাড়া এতে ৮ শতাংশ প্রোটিন এবং দুই শতাংশ চর্বি রয়েছে। চিতই পিঠা প্রচন্ড তাপে রান্না করা হয় বলে এতে থাকা জীবাণু সব মারা যায়।
চিতই পিঠাতে থাকা শর্করা আমাদের শরীরে শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। তাছাড়া চিতই পিঠাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রনের মত উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
চিতই পিঠা বানানোর পদ্ধতি?
চিতই পিঠা বানানোর উপায় বা কিভাবে খুব সহজেই ঘরে বসেই চিতই পিঠা বানানো যায় এই পদ্ধতি সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। নিচে চিতই পিঠা বানানোর পদ্ধতিটি খুবই সহজ ভাবে দেখানো হলোঃ
চিতই পিঠা বানানোর উপকরণ?
চিতই পিঠা বানানোর জন্য বেশ কিছু উপকরণের প্রয়োজন যার মাধ্যমে চিতই পিঠা অনেক সুস্বাদু হয়ে যায়ঃ
- দুই কাপ বাসমতি অথবা যে কোন আতপ চাল নিতে হবে।
- এক কাপ সাধারণ চাল নিতে হবে।
- আড়াই কাপ পানি নিতে হবে।
- তিন থেকে চার চামচ লবণ লাগবে।
- এক থেকে দুই কাপ নারকেলের কোরা নিতে হবে।
- এক চামচ বেকিং পাউডার নিতে হবে না নিলেও সমস্যা নেই।
গ্যাসের চুলায় চিতাই পিঠা বানানোর রেসিপি?
চিতই পিঠা সাধারণত আতপ চাল দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু এর সাথে কিছুটা সিদ্ধ চাল নিলে পিঠা অনেকটা ফুলকো হয়ে থাকে। তাই চিতই পিঠা বানানোর সময় যতটা আতপ চাল নিবেন তার অর্ধেক পরিমাণ সিদ্ধ চাল নিতে হবে।
পিঠা তৈরি করার আগে চালগুলো আপাতত পানিতে ডুবিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে তাহলে খুব সহজেই ব্লেড করা যাবেঃ
প্রথমে আপনাদেরকে ভিজিয়ে রাখা চালের পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে বেলেডারের জাগে নিয়ে নিতে হবে। তারপরে নারিকেল কোরা বাদে অন্য যে সকল উপকরণগুলো রয়েছে সেগুলো একসাথে করে মিহি পেস্ট করে নিতে হবে।
আস্তে আস্তে খুবই সুন্দর ভাবে উপাদান গুলো মিহি করে নিতে হবে। মিক্স করা হয়ে গেলে নারকেল কোড়া দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে চুলায় খুবই হাই হিটে পিঠার সাচ খুব ভালো মতো গরম করে একটি কাপড়ের সাহায্যে কিছুটা তেল + প্লাস পানি দিয়ে মুছে নিন।
তারপরে এতে পিঠার ব্যাটার ঢেলে সাথে সাথে ঢেকে দিতে হবে। তারপরে মিডিয়াম ও হাই আচে দিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট মত অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যেই পিঠা হয়ে যাবে। তারপরে একটা ছুরি বা কাঠির সাহায্যে পিঠাগুলো ছাঁচ থেকে খোঁচা দিয়ে তুলে নিতে হবে।
এবং একইভাবে বাকি ব্যাটার দিয়ে পিঠা বানিয়ে নিতে হবে। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে গরম গরম খেজুরের গুড়ের সাথে পরিবারের বাকি সদস্যদের মাঝে পরিবেশন করতে পারেন। তাছাড়া মাংসের ঝোলের সাথেও এই পিঠা পরিবেশন করতে পারেন।
দুধ চিতই পিঠা বানানোর পদ্ধতি?
দুধ চিতই পিঠা রেসিপি বা দুটি পিঠা কিভাবে বানানো হয় এর সঠিক নিয়মটা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
দুধ চিতই পিঠা বানানোর উপকরণ?
পোলাও এর চাল ও আতব চাল তিন কাপ, লবণ সামান্য, খেজুরের গুড় লাগবে দেড় কাপ, দুধ লাগবে ৩ লিটার এবং মালাই লাগবে এক কাপ, দারুচিনি দুই টুকরা, এলাচ দুইটি ও পানি লাগবে তিন কাপ।
দুধ চিতই পিঠা তৈরির নিয়ম?
চাল চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ভেজা অবস্থায় মিহি করে বেটে লবণ দিয়ে মাখিয়ে এক ঘন্টা মত ঢেকে রাখতে হবে। গোলানোর জন্য পরিমাণমতো কুসুম গরম পানি দিতে হবে তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গোলা যেন খুব ঘন না হয়।
লোহার কড়াই বা মাটির পিঠার খোলা চুলায় দিয়ে গরম হয়ে গেলে প্রথমবার সামান্য তেল মাখিয়ে বড় চামচের এক চামচ গোলা পিঠাই খোলা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তারপরে ঢাকনার উপর সামান্য পিঠা ছিটা দিতে হবে।
এবার চার থেকে পাঁচ মিনিট পর পিঠা তুলে নিতে হবে। তারপরে খেজুরের গুড় তিন কাপ পানি দিয়ে জাল দিতে হবে। এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে দিতে হবে এবং ফুটে উঠলে নামিয়ে গরম পিঠা গুড়ের সিরায় ভেজাতে হবে।
৩ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে দুই লিটার করে গুড়ের রসে মিশিয়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা মতো ভিজিয়ে রাখতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পিঠাগুলো যেন ওই পাত্রে ডুবে যায়। কেননা এই পিঠা টাটকা থেকে বাসি টাই বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে।
যদি বুঝে না থাকেন তাহলে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন। শহর অঞ্চলের থেকে গ্রাম অঞ্চলে শীতল পিঠা বেশি তৈরি করা হয়ে থাকে এবং এখানে চিতই পিঠা খুবই জনপ্রিয় হয়ে থাকে।
শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা চিতই পিঠা রেসিপি বা কিভাবে চিতই পিঠা বাড়ানো যায় এই বিষয়ে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন।