পড়াশোনা

নরসিংদী জেলার নামকরণের ইতিহাস

নরসিংদী জেলার নামকরণ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা এ অঞ্চলের প্রাচীন সংস্কৃতি, শাসনব্যবস্থা ও ভৌগোলিক পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই অঞ্চলের নামের উৎপত্তি রাজা নরসিংহের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়।নরসিংদী জেলার নামকরণের ইতিহাসকালের বিবর্তনে ও উচ্চারণগত সহজতায় এটি ‘নরসিংদী’ নামে পরিচিতি লাভ করে। আজকের আর্টিকেলে নরসিংদী জেলার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

নরসিংদী জেলার নামকরণের ইতিহাস?

নরসিংদী জেলার নামকরণ একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে গঠিত। পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চলে একটি নগর প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম রাখা হয় “নরসিংহপুর”।

রাজা নরসিংহের নামের সঙ্গে সংস্কৃত উপসর্গ ‘দী’ যুক্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে “নরসিংহদী” নামের উদ্ভব ঘটে। পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় এবং উচ্চারণের সহজতর রূপে “নরসিংহদী” নামটি পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান “নরসিংদী” নাম ধারণ করে।

এই নামকরণ কেবল একটি ভূ-প্রতিচ্ছবি নয়। বরং একটি গৌরবময় ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার প্রতিফলন বহন করে। মহিমান্বিত অতীত ও গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ নরসিংদী জেলা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

এ জেলার শিকড় বহু পুরাতন ইতিহাসে গাঁথা, যা সুলতানি ও মুঘল আমলের স্মৃতিবিজড়িত। সুলতানি আমলের সুবর্ণবীথি এবং মুঘল আমলের মহেশ্বরদী পরগণার বিভিন্ন অংশ একত্রিত হয়ে গঠিত হয়েছে নরসিংদী জেলার বর্তমান ভৌগোলিক সীমানা।

জনশ্রুতি অনুসারে, পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুতে রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ‘নরসিংহপুর’ নামে একটি ছোট নগর প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তার নামানুসারে ‘নরসিংহ’ এর সাথে ‘দী’ শব্দ যুক্ত হয়ে ‘নরসিংহদী’ নামটির উদ্ভব হয়।

কালের পরিক্রমায় এ নাম বিকৃত হয়ে আজকের ‘নরসিংদী’ রূপে পরিচিত হয়। ঔপনিবেশিক আমলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর নরসিংদী প্রশাসনিকভাবে ঢাকা জেলার অধীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৭৭ সালে এটি ঢাকা জেলার একটি মহকুমায় উন্নীত হয়। এরপর ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে নরসিংদী সদর, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরা এই ৬টি উপজেলা

এবং নরসিংদী পৌরসভা নিয়ে নরসিংদী জেলাকে স্বাধীন জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে শুরু হয় নরসিংদী জেলার একটি নতুন অধ্যায়, যার ভিত্তি ছিল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যে পূর্ণ এক ঐতিহ্যময় যাত্রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button