১ বিলিয়ন সমান কত টাকা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোটি, লাখ কিংবা হাজার এই ধরনের সংখ্যা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্কের পরিমাপ বা গণনায় কিছু ভিন্ন মাত্রার সংখ্যা ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে “বিলিয়ন” একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ।অনেক সময় টেলিভিশন, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা শুনি “অমুক কোম্পানির আয় ১ বিলিয়ন ডলার” বা “সরকার ১ বিলিয়ন টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে”। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই “১ বিলিয়ন” বলতে আমরা কত টাকা বুঝি?
এ সংখ্যাটি শুনতে যেমনঃ বিশাল, বাস্তব জীবনে এর পরিমাণও তেমনি অত্যন্ত বড়। এই আর্টিকেলে আমরা জানব, ১ বিলিয়ন সমান কত টাকা এবং এটি আমাদের পরিচিত সংখ্যার মানদণ্ডে কীভাবে বিবেচনা করা যায়।
বিলিয়ন কাকে বলে?
‘বিলিয়ন’ শব্দটি একটি বড় সংখ্যার পরিমাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত গাণিতিক হিসাব, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ বা বড় পরিমাণের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতিতেঃ
- ১ বিলিয়ন = ১,০০০ মিলিয়ন
- অর্থাৎ, ১ বিলিয়ন = ১,০০০,০০০,০০০ (একশো কোটি)
বিলিয়ন সাধারণত তখন ব্যবহৃত হয় যখন সংখ্যা অনেক বড় হয় এবং মিলিয়নের চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণ বোঝাতে হয়। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, জনসংখ্যা বিশ্লেষণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদিতে এই শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়।
১ বিলিয়ন সমান কত টাকা?
“১ বিলিয়ন” মানে ১,০০০,০০,০০,০০০ টাকা।
বাংলাদেশে বা ভারতীয় উপমহাদেশে “বিলিয়ন” বলতে বোঝায় পশ্চিমা সংখ্যাপদ্ধতি অনুযায়ী ১,০০০ মিলিয়ন, অর্থাৎঃ
- ১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি টাকা
- তাই ১ বিলিয়ন টাকা = ১০০,০০,০০,০০০ টাকা।
বিলিয়ন এর ইতিহাস?
‘বিলিয়ন’ শব্দটির উৎস এবং ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয়। এটি গণিত ও ভাষার বিকাশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত, এবং সময়ের সাথে সাথে এর সংজ্ঞা ও ব্যবহারেও এসেছে পরিবর্তন।
নিচে ধাপে ধাপে বিলিয়ন শব্দটির উৎপত্তি ও বিবর্তন তুলে ধরা হলোঃ
১. ‘বিলিয়ন’ শব্দের উৎপত্তি
- ‘বিলিয়ন’ শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ “billion” থেকে।
- এটি গঠিত হয়েছে লাতিন “bi-” (অর্থঃ দুই) এবং “million” (মিলিয়ন) শব্দের সমন্বয়ে।
- মূল ধারণা ছিল এক মিলিয়নের স্কোয়ার অর্থাৎ দুই ধাপ উপরে থাকা একটি বড় সংখ্যা।
- শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয় ১৬৯০ সালে ফ্রান্সে।
২. প্রাথমিক সংজ্ঞা (Long Scale)
১৬শ শতকে ইউরোপে “বিলিয়ন” শব্দটি লং স্কেল পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হত।
লং স্কেল অনুসারেঃ
- ১ বিলিয়ন = ১০^১২ = ১,০০০,০০০,০০০,০০০ (একটি সংখ্যার পরে ১২টি শূন্য)।
- এই সংজ্ঞা মূলত ইউরোপজুড়ে প্রয়োগ করা হতো।
৩. সংজ্ঞার পরিবর্তন (Short Scale)
১৭শ শতকের শেষ দিকে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স ভিন্ন ভিন্ন স্কেল ব্যবহার শুরু করে।
ফ্রান্স গ্রহণ করে Short Scale পদ্ধতিঃ
- যেখানে ১ বিলিয়ন = ১০^৯ = ১,০০০,০০০,০০০।
- তবে যুক্তরাজ্য তখনও লং স্কেল ব্যবহার করত।
৪. আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের দিকে যাত্রা
- ২০শ শতকের মাঝামাঝি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একমত হওয়ার জন্য বেশিরভাগ দেশ Short Scale গ্রহণ করে।
- যুক্তরাষ্ট্র ছিল শুরু থেকেই Short Scale ব্যবহারে অগ্রগামী।
- পরে যুক্তরাজ্য সহ আরও অনেক দেশও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই পদ্ধতি গ্রহণ করে।
৫. বর্তমান সংজ্ঞা
বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে বিলিয়ন = ১০^৯ = ১,০০০,০০০,০০০ (একশো কোটি)। এটি Short Scale পদ্ধতিতেই সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
৬. গাণিতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে ব্যবহার
১৯শ শতক থেকে বিলিয়ন শব্দটি আর্থিক হিসাব-নিকাশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উদাহরণঃ
- বিশ্ব অর্থনীতি (GDP)
- বৃহৎ বাজেট পরিকল্পনা
- কোম্পানির মোট সম্পদ
- জনসংখ্যা ইত্যাদি।
৭. বাংলাদেশে ‘বিলিয়ন’ শব্দের ব্যবহার
বাংলাদেশে ‘বিলিয়ন’ শব্দটি সাধারণত আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন, বাজেট, রিজার্ভ, ও জনসংখ্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদন ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভঃ একাধিক বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বড় প্রকল্পের বাজেটঃ যেমনঃ পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প।
শেষ কথা
এইভাবে ‘বিলিয়ন’ শব্দটি শুধু একটি সংখ্যার পরিমাপই নয়। বরং ইতিহাস ও বৈশ্বিক মানদণ্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হয়ে উঠেছে।