পড়াশোনা

খুলনা জেলার নামকরণের ইতিহাস

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত খুলনা জেলা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্যই বিখ্যাত নয়। বরং এর নামকরণের ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ ও বহুস্তর বিশ্লেষণের দাবিদার।

খুলনা নামটি কীভাবে এসেছে তা নিয়ে ইতিহাসবিদ, গবেষক ও স্থানীয় জনমনে নানা মত প্রচলিত রয়েছে। কারও মতে, এই নামের উৎস একটি প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনার সঙ্গে যুক্ত।খুলনা জেলার নামকরণের ইতিহাসআবার কেউ কেউ মনে করেন, স্থানীয় মৌজার নাম থেকেই খুলনার উৎপত্তি ঘটেছে। ইতিহাসের নানা স্তরে এই নামটির উচ্চারণ ও বানানে পরিবর্তন ঘটলেও, এর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য অপরিবর্তিত থেকেছে।

খুলনার নামকরণের পেছনে লুকিয়ে থাকা এই ইতিহাস আমাদের অতীত ঐতিহ্য ও পরিচয়ের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন গড়ে তোলে।

খুলনা জেলার নামকরণের ইতিহাস?

খুলনা জেলার নামকরণ নিয়ে নানা মত প্রচলিত রয়েছে। তবে ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের বিশ্লেষণে কিছু মত বেশি আলোচিত ও গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়।

১. খুলনেশ্বরী মন্দির থেকে নামের উৎপত্তি

অনেকের মতে, খুলনা নামটির উৎস ধনপতি সওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী খুলনার নামে নির্মিত খুলনেশ্বরী মন্দির। খুলনার প্রাচীন ইতিহাসে এই মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত, যা এলাকাটির নামকরণে প্রভাব রেখেছে বলে ধারণা করা হয়।

২. ইংরেজ নাবিকদের রেকর্ড

১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ’ নামক একটি ইংরেজ জাহাজের নাবিকদের উদ্ধারকৃত রেকর্ডে “Culnea” শব্দটি পাওয়া যায়, যা অনেকের মতে খুলনা নামের আদি উচ্চারণ বা বানান।

ইংরেজ ও ইউরোপীয় মানচিত্রে বহুবার Culnea, Colna ইত্যাদি রূপে এই অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়।

৩. কিসমত খুলনা মৌজা থেকে

আরেকটি জনপ্রিয় মত হলো, খুলনা নামটি এসেছে স্থানীয় একটি মৌজা ‘কিসমত খুলনা’ থেকে। এই মৌজাটি ব্রিটিশ আমলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি প্রশাসনিক একক ছিল এবং এলাকাটির পরিচিতি এই নামেই ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়াও আরও কিছু মত রয়েছে, তবে উপরোক্ত তিনটি তথ্যপ্রমাণসমৃদ্ধ ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। খুলনার ইতিহাস ধর্ম, সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক বিকাশের এক সমৃদ্ধ ধারাবাহিকতা বহন করে।

প্রায় ৬০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারক উলুঘ খানজাহান আলী (রহ.) এই অঞ্চলে আসেন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। তিনি প্রথমে সুন্দরবন এলাকায় বসতি স্থাপন করেন এবং বাগেরহাটসহ আশপাশের এলাকায় তার শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

তার এই উদ্যোগের ফলে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে ধীরে ধীরে জনবসতির প্রসার ঘটে। প্রশাসনিক দিক থেকে খুলনার ইতিহাস শুরু হয় ১৮৪২ সালে, যখন খুলনা যশোর জেলার একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

এরপর রূপসা নদীর তীরে নতুনভাবে গড়ে ওঠা খুলনা শহরের ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় ১৮৮১ সালে খুলনাকে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পরবর্তীতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ১৮৮২ সালে সাতক্ষীরা মহকুমাকে এই নবগঠিত খুলনা জেলায় সংযুক্ত করা হয় এবং খুলনা জেলা আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ মৌলভীবাজার জেলার নামকরণের ইতিহাস

১২ ডিসেম্বর ১৮৮৪ সালে খুলনা শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা পরবর্তীতে ১২ ডিসেম্বর ১৯৮৪ সালে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। খুলনার গুরুত্ব ক্রমাগত বেড়ে চললে,

এটিকে বিভাগীয় শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং অবশেষে ৬ আগস্ট ১৯৯০ সাল থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন হিসেবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। এর পাশাপাশি, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় খুলনা অঞ্চলকে

ভারতের অন্তর্ভুক্ত না করে পূর্ব পাকিস্তানে রাখার ক্ষেত্রে মরহুম খান এ সবুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও রাজনৈতিক প্রভাব খুলনার ভবিষ্যৎ গঠনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button