স্বাস্থ্য

পুষ্টি কাকে বলে | পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি

পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য। জীব তার জীবন ধারণের জন্য প্রতিনিয়ত যে সকল খাদ্য গ্রহণ করে। এবং সেই সকল খাদ্যগুলোর মধ্যে যে সকল উপাদান থাকে সে প্রত্যেকটি উপাদানকেই পুষ্টি বলা হয়। আর যে সকল খাদ্য আমরা গ্রহণ করি তার প্রত্যেকটিতেই বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান থাকে।পুষ্টি কাকে বলে যা আমাদের বা জীবদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শরীরকে স্বাস্থ্যবান করে গড়ে তুলতে প্রতিনিয়তই আমরা পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করার চেষ্টা করে থাকি। পুষ্টি হল এমন একটি উপাদান যার মাধ্যমে শরীরের সকল ক্ষয় পূরণ এবং বৃদ্ধি সাধন হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি জীব এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে জীবনের সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির উপাদান দরকার হয়ে থাকে।

প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটাতে না পারার কারণে অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এবং পরবর্তীতে মৃত্যু কোলে ঢলেও পড়তে পারে। আর এই পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রত্যেকটি জীব ও উদ্ভিদকে সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ের সাথে।

আর যখন তারা সংগ্রাম করে তখনও তাদেরকে পুষ্টির প্রয়োজন হয় এবং সেই সাথে অনেক বেশি ধৈর্যের ও শক্তির দরকার হয়। আর এই শক্তি আসে মূলত পুষ্টি থেকে। তাই পুষ্টি জীবদেহের জন্য খুবই উপকারি।

পুষ্টি কাকে বলে?

জীব তার দেহের চাহিদা পূরণ করার জন্য যে সকল খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করে পরিপাক করে থাকে তাকেই মূলত পুষ্টি বলা হয়। পুষ্টি এর সংজ্ঞা অগণিত কেননা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞানীরা আমাদের মাঝে যুক্তি তর্ক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা উপস্থাপন করেছেন এই পুষ্টি নিয়ে।

আমাদের শরীরের জন্য এবং অন্যান্য সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের শরীরের জন্য পুষ্টি হল একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা তাদের দেহে কাজ করার শক্তি যোগায়। তবে পুষ্টি বলতে শুধুমাত্র একটি উপাদানকে বোঝানো হয় এমন ধারণা করা হয়। কেননা পুষ্টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো উপাদান।

আরও পড়ুনঃ কন্টেন্ট রাইটিং করে আয়

পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি?

পুষ্টি আমাদের শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুষ্টি আমাদের শরীরকে কাজ করার শক্তি যোগায় এবং দেহ গঠন করে ও দেহের বিকাশে সাহায্য করে থাকে। তাই যে সকল খাদ্যের মধ্যে পুষ্টি রয়েছে সেই সব পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পুষ্টি কত প্রকার বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে খাদ্যে বিদ্যমান পুষ্টি পদার্থের কথা।

যা ইংরেজিতে আমরা nutrient বলে থাকি। এখন মূল বিষয় হচ্ছে, পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি? খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের পরিমানের উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমনঃ

  • Macronutrients (যে নিউট্রিয়েন্ট আকারে বড়)
  • Micronutrients (এই নিউট্রিয়েন্ট আকারে ছোট)

১. ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস

এই পুষ্টিটি যা মানুষ ও জীবন্ত প্রাণির খাদ্যের মুল উপাদান। যা বেচে থাকার শক্তি ও পুষ্টি অর্জনের জন্য অধিক পরিমানে খেতে হয়। এদের উদাহরণ হচ্ছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতিয় খাদ্য।

প্রোটিন

প্রোটিনকে এক কথায় একে আমিষ জাতীয় খাদ্য বলা হয়ে থাকে। পুষ্টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন খুব গুরত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। প্রায় বিশটি এমাইনো এসিড একটি অপরটির সাথে চেইন আকারে আবদ্ধ হয়ে প্রোটিন গঠিত হয়ে থাকে।

যার মধ্যে মূলত এর নয়টি হচ্ছে প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড যা আমাদের মানুষের দেহে তৈরি হতে পারে না। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাহির থেকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এটির অভাব পূরণ করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার দিয়ে ইনকাম

কার্বোহাইড্রেট

সুগার, স্টার্চ বা শ্বেতসার এবং ফাইবার হচ্ছে এই জাতিয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। সুগার হল সরল বা সিম্পল কার্বোহাইড্রেট যা পাকস্থলীতে পৌঁছার পর খুব সহজেই ভেঙ্গে গিয়ে প্রাণির শরীরে শোষণ হয়ে যায়। এদের থেকে শক্তি খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। তবে এটি খেলে ক্ষুধা থেকেই যায়। এবং পেট ভরা অনুভূতি তৈরি হয় না।

সুগার খাওয়ার ফলে রক্তে এর মাত্রা বেড়ে যায়। এবং এতে করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কার্বোহাইড্রেট জাতিয় খাদ্যের ফাইবার অংশের কিছু পরিমান পাকস্থলিতে ভেঙ্গে যায়। যা দেহে শোষিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের কাজে লাগে।

আর এক অংশ পরিপাকতন্ত্রে বিদ্যমান ব্যাক্টেরিয়া বিপাকিয় কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অবশিষ্ট অংশ দেহ পরিত্যাগ করে থাকে। স্টার্চ হচ্ছে এক প্রকার কমপ্লেক্স বা জটিল ধরণের কার্বোহাইড্রেট। ফাইবার সমৃদ্ধ স্টার্চ জাতিয় খাদ্য পাকস্থলিতে সহজে হজম হতে পারে না।

ফলে দীর্ঘক্ষন পর্যন্ত ক্ষুধা লাগার অনুভূতিও তৈরি হয় না। ফাইবার বিশিষ্ট খাদ্য ডায়াবেটিস সহ আরও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে।

চর্বি বা ফ্যাট

কিছু কিছু ভিটামিন আমাদের দেহে শোষণ হতে হলে ফ্যাট অর্থাৎ চর্বির উপস্থিতির প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন-কে। এই ভিটামিনগুলো মূলত আমাদের দেহের জন্য খুব প্রয়োজনীয় ভিটামিন। চর্বি জাতীয় খাদ্য না খেলে এই ভিটামিনসমুহ দেহে শোষণ হতে না পারায়।

এদের উপকারিতা থেকে আমরা বঞ্চিত হই বা হবো। এছাড়া দেহের আরও অন্যান্য প্রয়োজনে চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যা আমরা জানি না। তবে কিছু কিছু ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি আবার কিছু কিছু ফ্যাট এমন রয়েছে যারা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

তাই ফ্যাট জাতীয় খাদ্য গ্রহনের পূর্বে আমাদের ভালভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন যে, কোন ধরণের ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং কোন ধরণের ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আরও পড়ুনঃ কুইজ খেলে টাকা ইনকাম app

২. মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস

এরাও প্রয়োজনিয় খাদ্য উপাদান, যা দেহের স্বাভাবিক সুস্থতা ও কাজ কর্ম সম্পাদনের জন্য অল্প পরিমানে প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই ধরণের পুষ্টি উপাদান দেহের গঠন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং বৃদ্ধি সাধনের ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। এই জাতিয় পুষ্টির অভাবে দেহে অনেক ধরণের রোগ তৈরির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এদের উদাহরণ হচ্ছে মিনারেলস ও ভিটামিন

মিনারেলস

মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের মধ্যে মিনারেলস বা খণিজ লবন খুব স্বল্প পরিমানে দেহে প্রয়োজন হয়ে থাকে। শাক সবজি ও ফলমুলে প্রচুর পরিমানে খণিজ লবন পাওয়া যায়। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল সপ্লিমেন্ট রয়েছে। যেখান থেকে আপনি সহজেই এর অভাব পূরণ করতে পারেন।

ভিটামিন

ভিটামিন বা খাদ্য প্রাণ আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনিয় একটি পুষ্টি উপাদান। যদিও আমাদের দেহের জন্য এটি খুব স্বল্প মাত্রায় প্রয়োজন হয়। তবে স্বল্প মাত্রায় প্রয়োজন হলেও এর অভাবজনিত কারণে বড় বড় স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয় বা হতে পারে।

সাধারণত সবুজ শাক ও সবজি এবং ফলমুলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন থাকে। এজন্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় শাক ও সবজি এবং ফলমুল বেশি করে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ?

পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

ভিটামিন এর কাজ কি?

ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ হল জৈব খাদ্য উপাদান যা সাধারণত খাদ্যে খুবই অল্প পরিমাণে থেকে শরীরের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। দেহে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণের অভাবে বিভিন্ন ধরণের রোগ অথবা সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন ভিটামিন এ এর অভাবে চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

আরও পড়ুনঃ বিজ্ঞাপন দেখে টাকা আয়

পুষ্টি শব্দের অর্থ কি?

পুষ্টি হচ্ছে খাদ্য থেকে পাওয়া এমন উপাদান যা শরীরের বৃদ্ধি এবং শরীরের সকল কাজ কর্ম যেমন খাদ্য হজম , শ্বাসপ্রশ্বাস এবং দেহ উষ্ণ রাখার জন্য শক্তি সরবরাহ করে থাকে। খাদ্য পুষ্টিতে রয়েছে শরীরের টিস্যুগুলোর বৃদ্ধি, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পদার্থ।

শেষ কথা

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা মূলত পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে জানলাম। পুষ্টি একটি শরীরে শক্তি সরবারহ প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াতে খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয়। এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙ্গে সরল উপাদানে পরিণত হয়ে থাকে।

যা খাদ্য উপাদান শোষনের পরে খাদ্য উপাদানগুলো দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন করে থাকে। এবং দেহের বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন কোষ গঠন করে থাকে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ, তাপ উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুষ্টির যোগান দেয়।

দেহে খাদ্যের এই সকল কাজই পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত রয়েছে। অর্থাৎ পুষ্টি উপাদান হল প্রতিদিনের খাবারের গুণসম্পন্ন সেসব উপাদান যা মেধা ও বুদ্ধি বাড়ায়, দেহের শক্তি ও যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে, রোগ প্রতিরোধ করে। এবং অসুখ-বিসুখ থেকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে এবং মানুষকে কর্মক্ষম করে তুলে।

কোন খাদ্যে কী পরিমাণ ও কত রকম খাদ্য উপাদান থাকে। এর উপর নির্ভর করে খাদ্যের পুষ্টিমান কিংবা পুষ্টিমূল্য কতটুকু রয়েছে। যেমন সিদ্ধ চালে ৬% স্নেহ পদার্থ এবং ৭৯% শ্বেতসার থাকে। এছাড়া সামান্য পরিমাণ ভিটামিন আমিষ এবং খনিজ লবণ থাকে।

১০০ গ্রাম চাল থেকে ৩৪৫ থেকে ৩৪৯ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। সিদ্ধ চালে আমিষ, শ্বেতসার ও ভিটামিন থাকে। কিন্তু এতে শ্বেতসারের পরিমাণ একটু বেশি থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

A Friendly Request: Please Consider Disabling Your Ad Blocker