রংপুর নামকরণের ইতিহাস
বাংলার প্রতিটি জেলা, অঞ্চল কিংবা জনপদের নামের পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি বিশেষ ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা সংস্কৃতির ছাপ। তেমনি রংপুর নামটিরও রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় অতীত।ইতিহাস, লোককথা এবং ভাষার বিবর্তনের ধারায় রংপুর নামের উৎপত্তি নিয়ে গড়ে উঠেছে একাধিক মত ও কাহিনি। কখনও এটি জড়িয়ে গেছে নীলচাষের স্মৃতির সঙ্গে, আবার কখনও প্রাচীন রঙ্গমহলের নামকরণ কিংবা
আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে। রংপুর নামটির উৎপত্তি ও বিবর্তনের পেছনের এই ইতিহাস শুধু একটি নামের নয়। বরং এটি এক অঞ্চলের সমাজ, সংস্কৃতি ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে।
রংপুর নামকরণের ইতিহাস?
রংপুর নামকরণের পেছনে রয়েছে একাধিক কাহিনি ও ইতিহাসভিত্তিক ব্যাখ্যা, যেগুলো লোকমুখে আজও প্রচলিত। প্রথমত অনেকের মতে, ‘রংপুর’ নামটি এসেছে পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকে।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজরা ব্যাপকভাবে নীলচাষ শুরু করে। রংপুর অঞ্চলের মাটি ছিল অত্যন্ত উর্বর, ফলে এখানে প্রচুর পরিমাণে নীল চাষ হতো। স্থানীয় মানুষরা নীলকে ‘রঙ্গ’ নামে চিনত।
সময়ের সাথে সাথে এই ‘রঙ্গ’ থেকেই ‘রঙ্গপুর’ এবং পরে তা পরিবর্তিত হয়ে হয় ‘রংপুর’। আরেকটি প্রচলিত মত অনুযায়ী, রংপুর জেলার পূর্ব নাম ছিল ‘রঙ্গপুর’, যা এসেছে প্রাগ-জ্যোতিস্বর নরের পুত্র ভগদত্তের ‘রঙ্গমহল’ থেকে।
ধারণা করা হয়, সেই রঙ্গমহলের নাম থেকেই এই এলাকার নাম ‘রঙ্গপুর’ হয়েছে। রংপুর জেলার আরেকটি প্রচলিত নাম ছিল ‘জঙ্গপুর’। অতীতে এই অঞ্চলে ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ ছিল প্রবল।
ফলে অনেকেই এই এলাকাকে ‘যমপুর’ বলেও ডাকত। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, ‘জঙ্গপুর’ ছিল রংপুরের আদি নাম। ‘জঙ্গ’ শব্দের অর্থ যুদ্ধ, আর ‘পুর’ অর্থ নগর বা শহর।
অতীতে রংপুর ছিল এক রণাঙ্গন, যেখানে কৃষক ও সাধারণ মানুষ ইংরেজদের শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত। গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষ প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচার বা ম্যালেরিয়ায় প্রাণ হারাত, ফলে শহরে আসতে মানুষ ভয় পেত।
রংপুর জেলার অতীত ইতিহাসে আন্দোলন ও প্রতিরোধের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। ত্রিশের দশকের শেষ দিকে এ অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে।
এই বিপ্লবাত্মক চরিত্রের কারণেই রংপুরকে ‘লাল রংপুর’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। সার্বিকভাবে বলা যায়, রংপুর নামটির পেছনে রয়েছে গভীর ইতিহাস, লোককথা ও সংগ্রামের গৌরবময় স্মৃতি।