পড়াশোনা

কুমিল্লা জেলার নামকরণের ইতিহাস

কুমিল্লা জেলার নামকরণের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস এবং নানা মতবাদ। এই জেলার নাম “কুমিল্লা” এসেছে “কমলাঙ্ক” বা “কমলানগর” শব্দের অপভ্রংশ থেকে, যা প্রাচীনকালে এই অঞ্চলের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

একাধিক ঐতিহাসিক সূত্র এবং গবেষকের মতে, পাল ও সেন যুগে এ অঞ্চল ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনপদ। সংস্কৃত শব্দ “কমলাঙ্ক” অর্থ “পদ্মফুলাকৃতি অঞ্চল” বা “পবিত্র স্থান”,কুমিল্লা জেলার নামকরণের ইতিহাসযা সময়ের পরিক্রমায় “কামালাঙ্ক” থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রথমে “কামিলা” এবং পরবর্তীতে “কুমিল্লা” নামে পরিচিতি পায়। ব্রিটিশ শাসনামলে, প্রশাসনিক সুবিধার্থে এই নামকে আনুষ্ঠানিকভাবে “কুমিল্লা” হিসেবে প্রবর্তন করা হয়।

১৯৬০ সালের দিকে ‘টিপরা’ বা ‘ত্রিপুরা’ জেলার পরিবর্তে বর্তমান কুমিল্লা জেলার নাম সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়।

কুমিল্লা জেলার নামকরণের ইতিহাস?

বর্তমান কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। প্রাচীনকালে এই অঞ্চল ‘সমতট’ জনপদের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে।

কুমিল্লা নামকরণ সম্পর্কে নানা মত প্রচলিত রয়েছে। একটি উল্লেখযোগ্য মত হলো, চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ (Wang Chuan) এর ভ্রমণবৃত্তান্তে বর্ণিত “কিয়া-মল-ঙ্কিয়া” (Kia-mol-lon-kia) নামক স্থানের সঙ্গে কুমিল্লা নামের সাদৃশ্য রয়েছে।

ধারণা করা হয়, এই নামটি সময়ের বিবর্তনে ‘কমলাঙ্ক’ এবং পরে ‘কুমিল্লা’তে রূপান্তরিত হয়েছে। আরেক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ (Xuanzang) এর ভ্রমণবৃত্তান্তেও সমতট রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরের কথা বলা হয়েছে,

যার নাম ছিল “কামলঙ্কা” (Kamalanka)। এটি থেকেও ‘কুমিল্লা’ নামটির উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেক ঐতিহাসিক মত প্রদান করেছেন। এ অঞ্চলে আবিষ্কৃত বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বিশ্লেষণ করে জানা যায়,

খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকেই কুমিল্লা অঞ্চল ত্রিপুরার গুপ্ত সম্রাটদের অধীনস্থ ছিল। এসব নিদর্শন কুমিল্লার ইতিহাসে এর প্রাচীন রাজন্য শাসনের প্রমাণ বহন করে।

প্রাচীন যুগ

বর্তমান কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল। ইতিহাস অনুযায়ী, প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশে পরিণত হয়।

প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি অনুযায়ী জানা যায়, খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে এই অঞ্চল ত্রিপুরার গুপ্ত সম্রাটদের অধীন ছিল। সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত কুমিল্লায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেববংশ রাজত্ব করে।

নবম শতাব্দীতে এই অঞ্চল হরিকেল রাজাদের অধীনে আসে। দশম থেকে একাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শো বছর ধরে চন্দ্র রাজবংশ এ অঞ্চল শাসন করে, যা প্রত্নপ্রমাণ দ্বারা নিশ্চিত করা যায়।

মধ্যযুগ

মধ্যযুগে কুমিল্লা বিভিন্ন মুসলিম শাসকদের, বিশেষত মোগলদের অধীনে শাসিত হয়। মোগল প্রশাসনের অধীনে এই অঞ্চলে কৃষি, রাজস্ব আদায় এবং সামরিক ব্যবস্থার বিস্তার ঘটে।

ঔপনিবেশিক যুগ

১৭৬৫ সালে কুমিল্লা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। রাজস্ব আদায়ে সুবিধার জন্য কোম্পানি ১৭৬৯ সালে এখানে একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। সে সময় কুমিল্লা ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল।

১৭৭৬ সালে কুমিল্লাকে একজন কালেক্টরের অধীনে আনা হয় এবং ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠনের মাধ্যমে “ত্রিপুরা কালেক্টরেট” এর সূচনা ঘটে। ১৭৯৩ সালে তৃতীয় রেগুলেশন অনুযায়ী একজন দেওয়ানি জজ নিযুক্ত করা হয়।

এবং তাকেই ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ১৮৩৭ সালে ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের পদ পৃথক করা হয়, কিন্তু ১৮৫৯ সালে এই দুটি পদ পুনরায় একত্রিত করা হয়।

আধুনিক যুগ

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর, প্রশাসনিক প্রয়োজনে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নাম পরিবর্তন করে “কুমিল্লা” রাখা হয়। সেই সময় থেকেই জেলা প্রশাসকের পদটি “ডেপুটি কমিশনার” নামে পরিচিত হয়।

আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ী জেলার নামকরণের ইতিহাস

পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার দুটি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুনর্গঠন করে পৃথক জেলা হিসেবে গঠন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button