কক্সবাজার জেলার নামকরণের ইতিহাস
কক্সবাজার, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যার নামকরণ একটি বিশেষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ঘটেছে। এই জেলার নাম এসেছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নাম থেকে।
১৭৯৯ সালে তাঁর মৃত্যু পরবর্তী, তাঁর শরণার্থী পুনর্বাসন কার্যক্রমের স্মৃতি রক্ষার্থে এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয় ‘কক্সবাজার’। তবে, কক্সবাজারের ইতিহাস কেবল ব্রিটিশ শাসনেই সীমাবদ্ধ নয়।এর আগেও এই এলাকা আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল এবং মুঘল সম্রাট শাহ সুজার সময় এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ভূগোল বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
কক্সবাজারের নামকরণে তার এই ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ব্রিটিশ শাসকদের ভূমিকা একটি মিশ্র প্রভাব ফেলেছে, যা এই এলাকার ইতিহাসে এক গভীর চিহ্ন রেখে গেছে।
কক্সবাজার জেলার নামকরণের ইতিহাস?
কক্সবাজার জেলার ইতিহাস এবং নামকরণের পটভূমি খুবই আকর্ষণীয়। ৯ম শতাব্দীর গোড়ার দিকে ১৬১৬ সালে মুঘল অধিগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের এক বড় অংশ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
আর মুঘল সম্রাট শাহ সুজা যখন পাহাড়ী রাস্তা ধরে আরাকান যাচ্ছিলেন। ঠিক তখন তিনি কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং এখানেই ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দেন।
তার যাত্রাবহরের প্রায় এক হাজার পালঙ্কী কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ‘ডুলাহাজার’ শব্দটির অর্থ হলো হাজার পালঙ্কী।
মুঘলদের পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরা ও আরাকান এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে আসে, এবং তারপর পর্তুগিজ ও ব্রিটিশরা এই এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
কক্সবাজার নামটি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নাম থেকে এসেছে, যিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার ছিলেন। এর আগে কক্সবাজারের নাম ছিল ‘পালংকি’।
১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধ্যাদেশ জারি হলে বাংলার গভর্নর হিসেবে হিরাম কক্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি পালংকি মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন
এবং আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান সংঘাত নিরসনে চেষ্টা করেন। তিনি শরণার্থীদের পুনর্বাসনে অনেক অগ্রগতি সাধন করেন, তবে তার কাজ শেষ করার আগেই ১৭৯৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুনঃ সিরাজগঞ্জ জেলার নামকরণের ইতিহাস
তার পুনর্বাসন অবদান স্মরণীয় করার জন্য একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ও এর নামকরণ করা হয় ‘কক্স সাহেবের বাজার’। কক্সবাজার থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে। এবং পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে, যা শহরের প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করেন।